বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ফের ভাঙন Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ফের ভাঙন

বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ফের ভাঙন

বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ফের ভাঙন




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের গাইড বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ফের যমুনার ভাঙন শুরু হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুনঃনির্মিত বাঁধটির মধ্যবর্তী অংশে ভাঙন দেখা দেয়।

 

 

অল্প সময়ের মধ্যে ১৫০ মিটার বাঁধ ও বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা পাকা দালানসহ তিনটি বাড়ি যমুনার পেটে চলে যায়। এর আগেও চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুতে ভাঙনের কবলে পড়ে বাঁধটির শেষ প্রান্তের ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়। এ সময় ২৭টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

 

 

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ী এলাকায় ভাঙন রোধে গাইডবাঁধ নির্মাণে বাসেক ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অদক্ষ প্রকৌলশীদের কারণে সরকারের সাড়ে ৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় আরও ভাঙনের আশঙ্কা প্রবলতর হচ্ছে।

 

 

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে গড়িলাবাড়ীতে প্রতিবছর যমুনার ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এতে দেশের বৃহত্তর স্থাপনা হুমকিতে পড়ে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক/বিবিএ) সেতুর দুই কিলোমিটারের মধ্যে চেইনেজ ৪৫ মিটার থেকে চেইনেজ ৫০০ মিটার এলাকায় গাইডবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সে লক্ষ্যে বাসেক প্রাক্কলন প্রস্তুতপূর্বক ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে।

 

 

দরপত্রে ঠিকাদারের যোগ্যতায় একক কার্যাদেশে ২৪ কোটি টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এতে হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। অথচ একক কার্যাদেশে ২০-২২ কোটি টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা চাইলে শতাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেত। এতে যোগ্য ঠিকাদার নির্ণয়ের সুযোগ থাকার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বেশি ও যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হতো।

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে দক্ষিণ দিকে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখ থেকে উত্তর অর্থাৎ যমুনা নদীর বাম তীরে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাসেকের বধায়ক একটি প্রাক্কলন কমিটি গঠন করা হয়। প্রকৌশলী (সড়ক ও সেতু) মো. লিয়াকত আলীকে আহ্বায়ক এবং ঢাকাস্থ বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম ও বাসেকের তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী (সড়ক) মো. ওয়াসিম আলীকে সদস্য করা হয় কমিটিতে।

 

 

প্রাক্কলন কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে উল্লেখিত এলাকায় ৪৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কাজের ৩৭ কোটি ২২ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৫.৮৬ টাকার প্রাক্কলন তৈরি করেন। বাসেকের নদী শাসন কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনষ্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রদত্ত ডিজাইন অনুযায়ী এই প্রাক্কলন তৈরি করা হয়।

 

 

দরপত্রে অংশ নেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স (প্রা.) লিমিটেড ও মেসার্স শহীদ ব্রাদার্সকে এই কাজের দায়ীত্ব দেয়া হয়। ৩৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৪ টাকায় কাজটি ১২ মাসে সম্পন্ন করার জন্য ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেয়া হয়।

 

 

কার্যাদেশ পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়িলাবাড়ী এলাকায় যথাসময়ে কাজ শুরু না করে ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ওই এলাকায় ভেকু নামিয়ে তীরে মাটির কাজ শুরু করে। ১৯-২০ দিন ভেকু দিয়ে নদীর তীর লেভেল করতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতার কারণে পূর্বের ডাম্পিং করা পুরনো বালুভর্তি জিওব্যাগ-পাথরসহ শক্তমাটি আলগা হয়ে যায়। ফলে ২০১৯ সালের ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর অসময়ে যমুনার ভাঙনে ৫টি পাকা বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং আরো ১০টি বাড়ি ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দেয়।

 

 

পরে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতীর রক্ষার জন্য ব্লক ফেলতে শুরু করে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করায় দ্রুত ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলে নামকাওয়াস্তে কাজ শেষ করার চেষ্টা চালায়।

 

 

এরই মধ্যে চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুতে ভাঙনের কবলে পড়ে বাঁধটির শেষ প্রান্তের ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়। সে সময় ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করা হয়। অথচ ওই এলাকায় পাউবো’র কোন প্রকল্পই ছিল না। যমুনার ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) বঙ্গবন্ধু সেতুসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম।

 

 

যমুনা পাড়ের গড়িলাবাড়ী এলাকার আ. ছালাম, ইয়াজউদ্দিন, সুলতান, লাল মিয়াসহ অনেকেই জানান, নদীর তীরে ডাম্পিং না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিওব্যাগ ফেলে সিসি ব্লক বসিয়ে কোন রকমে কাজ শেষ করেছে। ফলে যমুনার স্রোত বারবার গাইড বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।

 

 

তারা জোর দিয়ে জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন প্রকৌশলী রাখা হয়নি বলে তারা শুনেছেন। পাউবো’র প্রকৌশলীকে পরামর্শক হিসেবে নিয়ে গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হলে টেকসই হতো বলে তারা মনে করেন।

 

 

প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে কাজ না করায় বারবার ওই এলাকার মানুষ যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। কাজ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে গাইড বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ায় প্রকল্পের টাকা যমুনা গিলে খাচ্ছে।

 

 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. মুক্তার আলী জানান, তারা যথাযথভাবে সিডিউল মোতাবেক কাজ শেষ করেছেন। যমুনার আকস্মিক স্রোতের তীব্রতা যেকোন স্থাপনাই ধংস করে দিতে পারে। গাইড বাঁধে ভাঙন তারই অংশ, এটা এক ধরণের দুর্ঘটনা।

 

 

বাসেক’র বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল কবীর পাভেল জানান, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষার্থে ২০০৪ সালে সেতুর পূর্ব পাড়ের দক্ষিণ পাশে কার্পেটিং ও সিসি ব্লকের মাধ্যমে গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০১৭ সালে যমুনার আঘাতে ভাঙন দেখা দেয়। সেসময় বাঁধ ও বাঁধের অভ্যন্তরের কয়েকশ’ বসতভিটা যমুনা গ্রাস করে নেয়।

 

 

পরে বাসেক পুনঃবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৪ টাকা টাকা ব্যয়ে ৪৫৫ মিটার ওই গাইড বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করে রানা বিল্ডার্স (প্রা.) লিমিটেড ও মেসার্স শহীদ ব্রাদার্স নামীয় দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

 

 

এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ড. এএসএম সাইফুল্লাহ জানান, শুধুমাত্র প্রকল্প প্রণয়নে নয়, বাস্তবায়নেও নদী শাসনে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান সেণ্টার ফর এনভায়রমেণ্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ও পাউবোকে সম্পৃক্ত রাখা প্রয়োজন। প্রয়োজনে নদী প্রবাহের ম্যাপিং করে তার ভিত্তিতে প্রজেক্ট ডিজাইন করা হলে বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD